• রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৯:২৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম

হিজড়া চক্রের দাপট সমুদ্রসৈকতে : অসহায় সংশ্লিষ্টরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: / ৮৫ বার ভিউ
আপডেট সময় : রবিবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৪

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের বালিয়াড়িতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে হিজড়া চক্র। প্রতিরাতেই কোনো না কোনো পর্যটককে তারা টার্গেট করে বেকায়দা ফেলছে। পর্যটক আর্কষণ করতে তারা নানান রঙের পোশাক ও অঙ্গিভঙ্গি দিয়ে কাছে টানছে। বেশির ভাগ সময় পর্যটকের গায়ে ধাক্কা লেগেই ইস্যু তৈরি করে ঝামেলার ছক আঁকছে হিজড়ারা। এতে সৈকত এলাকায় জড়িয়ে পড়ে বড় ধরনের ঝামেলা ও বিশৃঙ্খলা। ঠিক তেমন একটি ঘটনার জন্ম হয়েছে গত বৃহস্পতিবার গভীররাতে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়- কয়েকজন পর্যটক যুবক বৃহস্পতিবার রাতে সুগন্ধা পয়েন্টের বালিয়াড়িতে বিচরণ করছে। একই সাথে কয়েকজন হিজড়াও সেখানে হাঁটছে। এসময় পর্যটকের গায়ে কৌশলে ধাক্কা লাগে এক হিজড়ার। ওই সময় ধাক্কা লাগার ইস্যু তুলেই ওই পর্যটকের গায়ে হাত তুলে টানা-হেঁচড়া করতে থাকে। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে পর্যটকরা এসব হিজড়াদের ধাওয়া দেয়। এক পর্যায়ে হিজড়ারা রক্ষা পেতে আশ্রয় নেন সুগন্ধা পয়েন্টের ট্যুরিস্ট পুলিশের বক্সে। ওই সময় একজন হিজড়াকে হাতে লাঠি দিয়ে পর্যটক ও স্থানীয়দের এলোপাতাড়ি দৌঁড়াতে দেখা যায়। পরে পুলিশ বক্স থেকে হিজড়াদের বের করে দেওয়া হয়। এতেও বেপরোয়া ছিল হিজড়ারা। এরপর পর্যটক ও স্থানীয় লোকজন দল বেঁধে হিজড়াদের ব্যাপক মারধর করে স্থান ত্যাগ করান। এসব মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সর্বত্রে পর্যটন এলাকা নিয়ে আলোচনা-সমালোচন তৈরি হয়। প্রশ্ন তৈরি হয় স্থানীয় প্রশাসন নিয়েও। এদিকে বৃহস্পতিবার গভীররাতে প্রকাশ্যে এমন ঘটনা ঘটেও শুক্রবার ও গতকাল শনিবার ফের এসব হিজড়াদের বিচরণ দেখা যায় সৈকত এলাকায়। কোন মতেই বন্ধ হচ্ছে না তাদের বিচরণ এবং অপরাধ।

এছাড়া কয়েক বছর ধরে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের বালিয়াড়িতে প্রকাশ্যে চলাচল করছে একদল ভাসমান পতিতা। তারা সবসময় দলবদ্ধ হয়ে বালিয়াড়িতে বিচরণ করে। সন্ধ্যার পর থেকে গভীররাত পর্যন্ত সৈকতের বালিয়াড়িতে তাদের বিচরণ। খদ্দরের খুঁজে তাদের বিচরণ প্রকাশ্যে সমুদ্রসৈকত এলাকায়। খদ্দর পেলেই তারা নিয়ে যান, হোটেল সী-প্যালেসের পূর্ব পাশে সৈকতপাড়ার ব্লক-ডি এর তিনটি রিসোর্টে। এরমধ্যে রয়েছে ওশান ভিউ রিসোর্ট, ওশান এম্পায়ার রিসোর্ট ও রাজভীর রিসোর্ট। গণপূর্ত পার্কের পূর্বপাশেই এই তিনটি রিসোর্টের অবস্থান। সমুদ্রসৈকত সুগন্ধা পয়েন্টের বালিয়াড়িতে বিচরণ করা পতিতা ও হিজড়াদের একটি অংশ খদ্দর পেলেই এই তিন রিসোর্টে নিয়ে যান। সেখানে প্রতি রুম ভাড়া নেন দৈনিক ৫০০ টাকা করে।

সুগন্ধা পয়েন্টের এক টমটম চালক বলেন- সৈকতে যেসব হিজড়া এবং পতিতা রয়েছে তাদের নির্দিষ্ট টমটম আছে। তারা পর্যটক পেলেই টমটম চালকদের ফোন দেন। তারপর ওই টমটম নিয়েই সৈকত পাড়ার ওই সব রিসোর্টে যায়। আমি নিজেও কয়েকবার তাদের ভাড়ায় তুলেছিলাম। খদ্দর নিয়ে তারা সোজা ওশান ভিউ রিসোর্টে যায়। টমটম ভাড়া বহন করে খদ্দর। এছাড়া প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত হিজড়া-পতিতাদের নির্দিষ্ট টমটম গুলো অবস্থা করে সুগন্ধা পয়েন্ট কড়াই রেস্তোরার সামনে। সব টমটম চালক গুলো বখাটে টাইপের। হিজড়াদের সাথে খদ্দরের জন্য অপেক্ষা করে তারা।

সৈকত পাড়ার ওই তিন রিসোর্ট ছাড়াও হিজড়াদের নিয়মিত ভাড়া দিয়ে থাকে লাইট হাউজস্থ সমুদ্র কাস্তা গেষ্ট হাউজ ও এম আলী গেষ্ট হাউজ। লাইট হাউজস্থ ব্লক-৩-এ এই দুই গেষ্ট হাউজের অবস্থান। দীর্ঘদিন ধরে এই দুই গেষ্ট হাউজে সৈকতের ভাসমান পতিতা ও হিজড়াদের রুম ভাড়া দিয়ে যাচ্ছে বলে জানা যায়।

সমুদ্র কাস্তা গেষ্ট হাউজের পাশের এক দোকানদার বলেন- নজির নামে একব্যক্তি সমুদ্র কাস্তা গেষ্ট হাউজ পরিচালনা করেন। এই গেষ্ট হাউজে সবসময় হিজড়াদের রুম ভাড়া দিয়ে তাকে। কক্সবাজারের বাহির থেকে এসে সমুদ্র কাস্তাতে রুম নেন তারা। তাদের মাসিক রুম ভাড়া দিয়ে থাকেন নজির। এসব হিজড়ারা সন্ধ্যার পর বের হয়ে সমুদ্রসৈকতে যান। ওখান থেকে গভীররাতে বিভিন্ন সময় পর্যটকদের নিয়ে এসে গেষ্ট হাউজের রুম ঢুকান। বিষয়টি আশপাশের সব ব্যবসায়ীরা অবগত রয়েছে।

দুদিন আগে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে পর্যটক ও কয়েকজন হিজড়াদের সাথে প্রকাশ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সেখানে জড়িত ওই সময় হিজড়াদের অবস্থা সমুদ্র কান্তা কটেজে।

জানা যায়- রিসোর্টে নিতে পারলেই সেখানে ওৎপেতে থাকে পতিতা ও হিজড়াদের চক্র ছিনতাইকারীরা। তারপর তারা সবাই মিলে ওই খদ্দেরের সর্বস্ব ছিনিয়ে নেন। নির্দিষ্ট রিসোর্ট ও গেষ্ট হাউজে সহজেই রুম পাওয়ার সুবাধে পতিতা, হিজড়া ও ছিনতাইকারীদের সমন্বয়ে গড়ে উঠা এই সিন্ডিকেটটি গত দুই বছর ধরে সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট ও কলাতলী পয়েন্টে সক্রিয় রয়েছে।

এদিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে সন্ধ্যা নামলেই দেখা মিলবে সংঘবদ্ধ এমন কিছু নারীর। তাদের দেখে মনে হবে দল বেঁধে বেড়াতে এসে উপভোগ করছেন। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা এমন নয়। নারীদের এই দলে থাকা সবাই ভাসমান পতিতা এবং হিজড়া। তারা এখানে দেহ ব্যবসার জন্যও আসেননি। তারা অপেক্ষা করছে এক অভিনব স্টাইলে শিকার ধরার জন্য। আর তাদের আশেপাশে ছদ্মবেশে অবস্থান করছে পেশাদার ছিনতাকারীরা।

এই পতিতা ও হিজড়ারা ফুঁসলিয়ে কোনো খদ্দেরকে নিয়ে যাবে তাদের নির্দিষ্ট গেষ্ট হাউজ, রিসোর্ট বা নির্জন স্থানে। আর সেখানে ওৎপেতে থাকবে ছিনতাইকারীরা। তারপর তারা সবাই মিলে ওই খদ্দেরের সর্বস্ব ছিনিয়ে নেবে। তারা এভাবে জিম্মি করে বহু মানুষের সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়েছে।

পর্যটক সেবায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নিয়োজিত বীচকর্মীদের ইনচার্জ মো. হোসনে বলেন- সন্ধ্যার পর থেকে গভীররাত পর্যন্ত পতিতা-হিজড়াদের বিচরণ থাকে সৈকতের বালিয়াড়িতে। তারা ২০ থেকে ২৫ জনের একটি চক্র আছে। এসব পতিতাদের সাথে রয়েছে ৬ থেকে ৮জন ছিনতাইকারী। পতিতরা বালিয়াড়িতে ঘুরবে আর ছিনতাইকারীরা উপরে রাস্তার দিকে অবস্থান করবে। তাদের বেশি অবস্থান সুগন্ধা পয়েন্টে। এসব পতিতারা বিভিন্ন পর্যটকদের ফাঁদে পেলে কটেজ রুমে নিয়ে যায়। এরপর তাদের মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেন। এমন ঘটনা অনেক ঘটেছে। আমরা ম্যাজিস্ট্রেট স্যারের মাধ্যমে এসব ফাঁদ থেকে অনেক মোবাইল উদ্ধার করেছি।

মো. হোসেন বলেন- আগের তুলনায় হিজড়ারা এখন কমে গেছে। ম্যাজিস্ট্রেট স্যার তাদের প্রধানকে ডেকে এনে সৈকতে না নামতে নিষেধ করেন। একই সাথে বিভিন্ন অপরাধে জরিমানাও করেছে। এরপর থেকে লোকাল হিজড়াদের বিচরণ কমেছে গত এক মাস ধরে। কিন্তু অন্য জেলা থেকে কয়েকজন হিজড়া এসে বিচরণ করতে দেখা যায়। তবে এসব অপরাধীদের ফাঁদ থেকে রক্ষা পেতে পর্যটকদেরও সজাগ থাকতে হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো নিউজ পড়ুন