• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:২৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
রামুতে ২ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইসসহ আটক ১ কক্সবাজারে জলকেলি উৎসবে বিভিন্ন প্যান্ডেল পরিদর্শনে মেয়র মাহাবুব বাংলাবাজার-খুরুশকুল সড়কে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সংস্কার টর্চার সেল ‘জিনিয়া রিসোর্ট’র বার্মায়া জমির কারাগারে কলাতলী কবিরের ইয়াবা লুট ‘পুলিশের সোর্স’ পরিচয়ে টইটংয়ে গভীর রাতে সংরক্ষিত বনে স্থাপনা নির্মাণ রামুতে প্রবাসীর বাড়িতে হামলা ভাঙচুর–লুটপাট : আটক ২ ডিবিসি নিউজ টেলিভিশনের ডিজিটাল মিডিয়া’র টেকনাফ প্রতিনিধি নিয়োগ পেলেন সাংবাদিক শাহীন কক্সবাজারে ‘পেশাদার প্রেমিক’ আজিজের ফাঁদে বহু নারীর সর্বনাশ মোটিভেশনাল স্পিকার সুশান্ত পালের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান

কলাতলীতে বনবিভাগের নামে ব্যাপক চাঁদাবাজি ‘সিপিজি’ সদস্যদের

নিজস্ব প্রতিদেক / ৯৮৬ বার ভিউ
আপডেট সময় : সোমবার, ২৯ মার্চ, ২০২১

সভাপতি সোলতানে নেতৃত্বে সক্রিয় সিন্ডিকেট, পাহাড় কাটা ও ঘর তৈরিতে দিতে হয় টাকা, অবগত খোদ বনবিভাগও।

আরফাতুল মজিদ

কক্সবাজার শহরের কলাতলী ও ঝিলংজা পাহাড়ী এলাকায় সরকারি জমি বিক্রি ও পাহাড় কর্তনে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে আসছে একটি সক্রিয় গ্রুপ। বনবিভাগের নাম দিয়ে চন্দ্রিমার ঘোনা, বখতিয়ার ঘোনা, জুলুর ঘোনা, ঝরঝড়িকুয়া এলাকা, বড়ছড়া দরিয়ানগর, শুকনাছড়িসহ আশপাশের পাহাড়ি এলাকায় ঘর তৈরিতে চাঁদা দিতে হয় গ্রুপটিকে। চাঁদা না দিলেই বনবিভাগের ভয় দেখিয়ে কৌশলে টাকা আদায় করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। টাকা আদায়ে প্রধান রয়েছে চন্দ্রিমা এলাকার সোলতান নামে একব্যক্তি।

সোলতান বন ও জীব বৈচিত্র রক্ষায় কমিউনিটি পেট্রোলিং গ্রুপ (সিপিজি) এর কলাতলী বিটের সভাপতি। সিপিজি সভাপতির নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন সিপিজি সদস্য বনবিভাগের নাম ব্যবহার করে অসহায় মানুষ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে বহু। এদের মধ্যে অন্যতম চন্দ্রিমা এলাকার কাশের ওরফে হাত কাটা কাশেম, রফিক, ছৈয়দ আলম(সিপিজি সদস্য নয়), বাইঙ্গার বাপ ও দরিয়ানগর এলাকার লায়লী, আব্দুল খালেক ও ছৈয়দ আলম লেড়–। খোদ বনবিভাগও শুনেছে, বনবিভাগের নাম ব্যবহার করে কয়েকজন সিপিজি’র সদস্যসহ স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট করে মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত একবছর ধরে কলাতলী চন্দ্রিমাঘোনা, বখতিয়ারঘোনা, জুলুর ঘোনা ও ঝরঝড়িকুয়া এলাকায় ব্যাপক পাহাড় কাটা চলছে। ইতিমধ্যে সরকারি পাহাড় কেটে তৈরি হয়েছে শতাধিক ঘরও। বর্তমানে ১২টি জায়গায় চলছে পাহাড় কাটা ও ঘর তৈরির কাজ। পাহাড় কাটার সুযোগে বনবিভাগের নাম ব্যবহার করে পাহাড় কর্তনকারীদের কাছ থেকে কৌশলে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সিপিজি’র বেশ কয়েকজন সদস্য।

সম্প্রতি শ্রমিক দিয়ে পাহাড় কেটে ঘর তৈরি করেছে রচনা পাল নাম একমহিলা। জানুয়ারির শুরুতে তিনি পাহাড় কাটার সময় বনবিভাগের লোক পরিচয়ে বাধা দেন সিপিজি’র সদস্য কাশেম। এক পর্যায়ে রচনা পাল থেকে ৫ হাজার ও ৩ হাজার করে দুই দফা টাকা আদায় করেন কাশেম। যার একটি অংশ নেন সোলতান। বর্তমানে পাহাড় কেটে ঘর তৈরির কাজও শেষ হয়েছে। দেড় মাস আগে জসিম নামে একব্যক্তি পাহাড় কাটার সময় বনবিভাগের লোক পরিচয়ে যেখানে যান কাশেম। সেখান থেকেও টাকা নিয়ে চলে আসে সিপিজি’র এই সদস্য।

সম্প্রতি চন্দ্রিমার ঘোনা বাদশার দোকানের সামনে পাহাড়ি মাটি দিয়ে রাস্তা ভরাটের কাজ শেষ হয়। ওই কাজে বাধা দেন সিপিজি’র সভাপতি সোলতান। পরে বখতিয়ারঘোনাস্থ ‘পাহাড়িকা সমাজ কমিটির’ সেক্রেটারি কামাল উদ্দিন নিজেই ১০ হাজার টাকা দেন সোলতানকে। বনবিভাগের নাম দিয়েই এই ১০ হাজার টাকা নেন সোলতান। বিষয়টি এলাকার সবাই অবগতও রয়েছে। সোহেল নামে একব্যক্তি চন্দ্রিমার ঘোনা এলাকায় চার গন্ডার একটি প্লট কিনেন। ওই প্লটের কিছু অংশ ছিল পাহাড়। প্রায় তিন মাস আগে পাহাড় কেটে প্লট সমতল করার সময় বনবিভাগের নামে বাধা দেন সোলতান। পরে তার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে চুপ সিপিজি’র সভাপতি সোলতান।

দুই মাস আগে ফয়েজ নামে একব্যক্তি পাহাড় কাটার সময় বাধা দেন কাশেম। তার কাছ থেকে বনবিভাগের নামে নেন ৩ হাজার টাকা। “বন বিভাগ আমি ম্যানেজ করবো, তুমি পাহাড় কেটে ঘর তৈরি করো, কেউ কিছুই বলবে না” এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে লম্বা বুড়ি ওরফে আলমগীরের কাছ থেকেও ৫ হাজার টাকা নেন সিপিজি সদস্য কাশেম। সম্প্রতি দখলে থাকা কিছু সরকারি পাহাড়ি জমি বিক্রি করেছেন নুরুল হক ফরাজি। বর্তমানে সেখানে চলছে পাহাড় কাটা। সরকারি জমি বিক্রি ও পাহাড় কাটা বাবদ বনবিভাগের নামে টাকা নেন ছৈয়দ আলম। যার একটি অংশ দেওয়া হয়েছে সোলতানকে।

স্থানীয় লোকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এখানে একটু পাহাড় কাটলেও সিপিজি সদস্যদের টাকা দিতে হয়। ঘর তৈরি করলেও তাদের টাকা দিতে হয়। সিপিজি সদস্যরা বনবিভাগের লোক পরিচয় দিয়ে ৩ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে প্রতিজন থেকে। টাকা না দিলে তারা বনবিভাগের লোক দিয়ে মামলা ও উচ্ছেদের হুমকি দেয়। যে যার মতো করে বনবিভাগের নাম ব্যবহার করে সিপিজি সদস্যরা টাকা আদায় করে যাচ্ছে। এরমধ্যে হাসিম, সোলতান ও রফিক অন্যতম। এই যাবৎ চন্দ্রিমা ঘোনা, বখতিয়ার ঘোনা, জুলুর ঘোনা ও ঝরঝড়িকুয়া এলাকায় যত পাহাড় কাটা হয়েছে প্রতিটি জায়গা থেকে তারা বনবিভাগের নাম দিয়ে টাকা আদায় করেছে। সিপিজি সদস্যদের টাকা দিয়ে পাহাড় কাটা শেষ করে তৈরি করা হয়েছে ঘর। টাকা না দিলে তারা বিভিন্ন ধরণের হয়রাণি করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাহাড় কেটে ঘর তৈরি করা একব্যক্তি বলেন, এই এলাকায় একটি সিপিজি সদস্যদের সিন্ডিকেট রয়েছে। কেউ ঘর তৈরি করলেও টাকা দিতে হয়, কেউ পাহাড় কাটলেও টাকা দিতে হয়। গাছ কাটলেও দিতে হয় টাকা। বনবিভাগের নাম দিয়ে এরমধ্যে বেশির ভাগ টাকা তুলেন সদস্য কাশেম। বড় কোন পাহাড় কাটা বা গাছ কাটা হলে হাজির হন সোলতান বা তার সহযোগি রফিক। কাশেমের মাধ্যমে টাকার ভাগ নেন সোলতান। বনবিভাগের লোকজনকে ম্যানেজ করতে হবে বলেই তারা টাকা নেন।

তিনি বলেন, এখানে কেউ টাকা না দিয়ে ঘর তৈরি করতে পারেনি। পাহাড়ও কর্তন করতে পারেনি। কেউ যদি গোপনে খবর বা অনুসন্ধান করেন তাহলে জানতে পারবে কে কত টাকা চাঁদা নিয়েছে। তবে প্রকাশ্যে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছুই বলবে না।

অভিযোগের বিষয়ে ছৈয়দ আলম বলেন, বনবিভাগের নাম দিয়ে আমি কারো থেকে টাকা আদায় করেনি। হয়ত সিপিজি’র অনেক সদস্য টাকা নিতে পারে। কেউ কেউ টাকা নিয়েও থাকে। তবে আমি জড়িত নয়। এক পর্যায়ে নিউজ তার নাম না দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

সিপিজির সদস্য কাশেম বলেন, বিট অফিসারের সাথে আমরা অভিযানে যায়। বনবিভাগকে সহযোগিতা করি। এখানে কোন টাকা আদায় করা হয় না। আমার নামে কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়েছে।

কলাতলী বিটের সিপিজি’র সভাপতি সোলতান আহমদ বলেন, কারো থেকে আমি টাকা আদায় করিনি। এসব মিথ্যা কথা। হয়ত সিপিজি’র সদস্যরা পাহাড় কর্তন বা গাছ কাটার খবর শুনে গেলে তাদের খরচের জন্য কয়েক টাকা দেয়।

কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের কলাতলী বিট অফিসার সোহেল রানা বলেন, আমিও শুনেছি বনবিভাগের লোক পরিচয় দিয়ে অনেকেই টাকা আদায় করেছে। এতে স্থানীয়দের সাথে সিপিজি’র বেশ কয়েকজন সদস্যও জড়িত বলেও জানা গেছে। তবে ভুক্তভোগিরা কেউ সহজে মুখ খুলে না। যে হোক না কেন বনবিভাগের পরিচয়ে কেউ যদি টাকা আদায় করে তাহলে প্রমাণসহকারে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া বনের জমিতে কেউ ঘর করতে পারছে না। জনবল কম হলেও আমরা নিয়মিত অভিযান ও টহল করে যাচ্ছি।

কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের সদর রেঞ্জ অফিসার সমীর রঞ্জন সাহা বলেন, অনেকদিন ধরে শুনা যাচ্ছে চন্দ্রিমারঘোনা, বখতিয়ার ঘোনা, জুলুর ঘোনা ও দরিয়ানগর এলাকায় বনবিভাগের নাম ব্যবহার করে একটি চক্র চাঁদা আদায় করে যাচ্ছে। পাহাড় কর্তন, গাছ কর্তন ও ঘর তৈরিতে তাদের টাকা দিতে হয়। তারা বনবিভাগের নাম ব্যবহার করছে। এতে সিপিজি’র বেশ কয়েকজন জড়িত বলেও শুনা যাচ্ছে। এমনকি সিপিজি’র সভাপতি সোলতানের নামও বিভিন্নভাবে শুনা যাচ্ছে বনবিভাগের নামে টাকা আদায় করতে। প্রমাণসহ অভিযোগ হাতেনাতে পেলেই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, বনবিভাগের জমিতে কেউ নতুন করে ঘর তৈরি করতে পারছে না। পাহাড় কাটার প্রশ্নও আসেনা। বনবিভাগের জমিতে কেউ কিছু করলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ইতিমধ্যে বনের জমিতে নির্মাণ করা অনেক স্থাপনা উচ্ছেদও করা হয়েছে। আমরা এবিষয়ে সজাগ রয়েছি যাতে বনের জমি দখল না হয়।

এবিষয়ে জানতে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর এর মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি। এতে বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে বক্তব্য পাওয়া গেলে গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো নিউজ পড়ুন