• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৩৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
কক্সবাজারে সাংবাদিক বাপ্পি শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে মামলা : ক্র্যাকের নিন্দা রামুতে ২ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইসসহ আটক ১ কক্সবাজারে জলকেলি উৎসবে বিভিন্ন প্যান্ডেল পরিদর্শনে মেয়র মাহাবুব বাংলাবাজার-খুরুশকুল সড়কে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সংস্কার টর্চার সেল ‘জিনিয়া রিসোর্ট’র বার্মায়া জমির কারাগারে কলাতলী কবিরের ইয়াবা লুট ‘পুলিশের সোর্স’ পরিচয়ে টইটংয়ে গভীর রাতে সংরক্ষিত বনে স্থাপনা নির্মাণ রামুতে প্রবাসীর বাড়িতে হামলা ভাঙচুর–লুটপাট : আটক ২ ডিবিসি নিউজ টেলিভিশনের ডিজিটাল মিডিয়া’র টেকনাফ প্রতিনিধি নিয়োগ পেলেন সাংবাদিক শাহীন কক্সবাজারে ‘পেশাদার প্রেমিক’ আজিজের ফাঁদে বহু নারীর সর্বনাশ

‘ভারত রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে আন্তরিক সমর্থন দিচ্ছে না’

নিজস্ব প্রতিদেক / ৭০৩ বার ভিউ
আপডেট সময় : বুধবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০

ড. রাহমান নাসির উদ্দীন, খ্যাতনামা নৃ-বিজ্ঞানী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন রোহিঙ্গাদের নিয়ে। দিয়েছেন বিশ্বখ্যাত তত্ত্ব ‘Subhuman’ অর্থাৎ না-মানুষ। বিভিন্ন দেশ নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে রাষ্ট্র নিজেই জনগণকে রাষ্ট্রহীন করে ফেলার যে ধারা তা নিয়ে সোচ্চার সবসময় ।

ড. রাহমান নাসির উদ্দীন স্কাইপের মাধ্যমে যুক্ত হয়েছিলেন ভয়েসওয়ার্ল্ড২৪ এর সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে। ভয়েসওয়ার্ল্ডের সাক্ষাৎকার বিভাগের প্রধান তানভিরুল মিরাজ রিপনকে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন রোহিঙ্গা সংকট ও সমাধান বিষয়ে। প্রসঙ্গে উঠে এসেছে ব্লু-ইকোনোমি, চীন-ভারত দ্বন্দ্বের বিষয়টিও। ভয়েসওয়ার্ল্ডের পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল।

ভয়েস ওয়ার্ল্ড: রোহিঙ্গা সমস্যাটা কেনো?

রাহমান নাসির: রোহিঙ্গা সংকটকে আমি পাইকারি ধারনার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে রাজি নই। রোহিঙ্গাদের প্রতি নির্যাতনটা কেনো হয়েছে তার একটি ব্যাখ্যা যদি আমি দিতে চাই, রাষ্ট্রগঠনের ক্ষেত্রে সংখ্যার গুরত্বের যে ফ্রেমওয়ার্ক, সেটিকে আমরা বলি এক রৈখিক। সেখানে মিয়ানমার প্রধানত বামাদের একটি রাষ্ট্র। ধর্মের দিক থেকে বৌদ্ধ মেজরিটির একটি দেশ। সুতরাং নৃতাত্ত্বিকভাবে দেখলে রোহিঙ্গারা নন মেজোরিটি। এদিক থেকে দেখলে আমরা সমস্যাটি বুঝতে পারবো না। আমাদের মনে রাখতে হবে ব্রিটিশ উপনিবেশের আগেও আরাকানের (রাখাইন রাজ্য) একটি ইতিহাস আছে। সুতরাং সেখানে তাদের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রহীন, অ-নাগরিক যে টার্মগুলো ব্যবহার করছে সেটির স্পষ্ট সমাধান আছে। সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কারনে ১৯৮২ সাল থেকে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে রাষ্ট্রহীন করা হয়েছে। এ সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে মিয়ানমার যে রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে ওঠা ও বিকাশের ক্ষেত্রে ব্যর্থ তারই প্রমাণ বহন করে।

ভয়েস ওয়ার্ল্ড: চীন ভারত দ্বন্দ্ব বাংলাদেশের দিকে যেভাবে ধেয়ে আসছে, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সে সুযোগ ব্যবহার করতে পারে?

রাহমান নাসির: চীন ভারতের দ্বন্দ্ব নতুন না। এটির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আছে। চীন-ভারত এশিয়ার দুটো বড় রাষ্ট্র। যেহেতু এখন পুঁজিবাদের সময় সেহেতু চীন-ভারত বিশ্বের কাছে একটি বড় মার্কেট। তার ফলে এ দুই দেশের মধ্যে একটি আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তারের জন্যই ভারত-চীন দ্বন্দ্ব। এ দ্বন্দ্ব বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে সেটি আমি বলব না।

রোহিঙ্গা ইস্যুটি ভারত-চীন দ্বন্দ্বের দিক থেকে বিবেচনা করলে দেখা যায়, চীন মিয়ানমারকে শর্তহীনভাবে সমর্থন করে আসছে। আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোতে চীন আধিপত্য বিস্তার স্থির রাখতে চায়। ভারতের বিষয়ে যদি বলি, ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় মোড়লত্বের জায়গায় আছে। এখন দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য মিয়ানমারকে গেট-ওয়ে হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে কিনা তার সহজ উত্তর দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশ আসলে কিভাবে, কোন প্রক্রিয়াতে ব্যবহার করবে?

আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক আবেগ দিয়ে চলে না। কূটনীতিক সম্পর্ক আবেগে চলে না, স্বার্থে চলে। ভারত রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে আন্তরিক সমর্থন দিচ্ছে না। যতটুকু প্রদর্শন তা কূটনীতিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার স্বার্থে যতটুকু করতে হয়। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত-চীন দুটোই মিয়ানমারের পক্ষে। বাংলাদেশ, চীন ভারত দ্বন্দ্বে খুব বেশি কিছু করতে পারে তা নয়।

ভয়েস ওয়ার্ল্ড: ব্লু ইকোনমির যে ভবিষ্যত তাতে কি রোহিঙ্গা বিরূপ প্রভাব ফেলবে না?

রাহমান নাসির: অনেকে বলেন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বার্ডেন । আমি তা না বলে রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি একটি চাপ সৃষ্টি করেছে। এটা শুধু অর্থনৈতিক চাপ না, সামাজিক চাপও সৃষ্টি করেছে। উখিয়া টেকনাফের জনগণের মধ্যে যে রোহিঙ্গা বিরোধী সেন্টিমেন্ট তৈরি হয়েছে এটির অনেকগুলো কারন আছে। উখিয়া টেকনাফে স্থানীয় জনগণের সংখ্যা রোহিঙ্গাদের তুলনায় খুব কম, সেখানে নিজের এলাকায় তারা সংখ্যালঘু হয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ফলে স্থানীয় শ্রমবাজারে একটি প্রভাব পড়েছে, প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনায়, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে প্রভাব পড়েছে । তবে আমি মনে করিনা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলছে।

ভয়েসওয়ার্ল্ড: আগস্ট মাসেই কেনো মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়ে?

রাহমান নাসির: আগস্টেই করছে এভাবে বলা যাবে না। তবে আগস্ট মাসকে রোহিঙ্গারা গণহত্যার মাস হিসেবে দেখে। মিয়ানমার ১৯৭৮ সালে ‘অপারেশন ড্রাগন’ বলে একটি কিলিং অপারেশন চালায়। ১৯৯১ সালে ‘অপারেশন ক্লিনিং এন্ড বিউটিফুল নেশন’ বলে আরেকটি কিলিং অপারেশন চালায় রোহিঙ্গাদের ওপর। ২০১২, ২০১৬, ২০১৭ সালেও তারা নির্যাতন চালায়। এবং সেটি বিভিন্ন সময়ে। রাষ্ট্র নিজে আধিপত্য বিস্তারের জন্যই করে এ নির্যাতন।

ভয়েস ওয়ার্ল্ড: সমাধান কোথায় ঝুলে আছে?

রাহমান নাসির: রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান মিয়ানমারের হাতে। যেকোনো ধরনের শরনার্থী সমস্যা সমাধানে তিনটা ধাপ আছে। সমাজে আত্মীকরণ, প্রত্যাবাসন, তৃতীয় কোনো দেশে পাঠিয়ে দেওয়া। সমাজে আত্মীকরণ বিষয়টি আমার কাছে অভাবনীয় ও অবান্তর৷ তবে একমাত্র পথ প্রত্যাবাসন।

ভয়েসওয়ার্ল্ড: ধন্যবাদ আপনাকে।

রাহমান নাসির: আপনাকেও ধন্যবাদ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো নিউজ পড়ুন